ড্রাগন ও মাল্টা বাগানে অর্ধশত লোকের চাকুরি দিয়েছেন কৃষি উদ্যোক্ত মেহেদী হাসান মিলন

প্রকাশিত: ৪:১৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৯, ২০২২

হাফিজুল ইসলাম স্বপন:
কৃষকের ছেলে । পড়ালেখা করে বিশ^বিদ্যালয়ে । মন পরে থাকে বাপ দাদার পেশা কৃষি কাজের দিকে । ভুলতে পারে না সুধা মাটির গন্ধ । ছাত্র জীবন থেকে কৃষি কাজে খুব মনোযোগ ছিল তাই তো ছাত্রাবস্থায় মাটির টানেই বিশ^বিদ্যালয় থেকে বার বার ছুটে আসে গ্রামের ক্ষেত খামারে। বিশ^বিদ্যালয় থেকে অনার্স মাষ্টাস পাস করার পরও চাকুরির পিছনে না ঘুরে নিজেই ৩২ একর জমিতে গড়া ড্রাগন , মাল্টা , লেবুর বাগান ,গরুর ফার্ম আর প মাছের খামারে প্রায় অর্ধশত মানুষের চাকুরি দিয়েছেন তরুন উদ্যোক্তা। স্বপ্ন তার নিজ গ্রামের লাল মাটিতেই গড়ে তোলবে আরবের আজুরা , মরিয়ম জাতের খেজুরের বাগান । তরুন এ কৃষি উদ্যোক্তা হলেন ময়মনসিংহের ফুলবড়ীয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের পাহাড় অনন্তপুর গ্রামের মোহাম্মদ ইউনুছ আলীর ছেলে বিশ^বিদ্যালয় পাস করা যুবক মেহেদী হাসান মিলন ।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পেশাগত কৃষকদের পাশাপাশি তরুন কৃষি উদ্যোক্তারাও ড্রাগন ও মিশ্র ফলের চাষের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। তাদেরই একজন জগনাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স মাষ্টাস করা তরুন যুবক মেহেদী হাসান মিলন । বানিজিভাবে মাল্টা বা ড্রাগস চাষ করে সফলতার মূখ না দেখলেও মেহেদী হাসান মিলন সফলতা অর্জন করেছেন । উপজেলার ৮ নং রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে পাহাড় অনন্তপুর গ্রামে পেত্রিক ২ একর জায়গায় অল্প পুঁজিতে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। ফলন ভাল ও বাজার ধর ভাল পাওয়া আরো ২ একর জমিনে মাল্টার চারা রোপন করেন । মাল্টা ও ড্রাগন বিক্রির টাকায় ১০ একর জমি ১০বছর মেয়াদী লীজ নিয়ে গড়ে তোলেছেন বিশাল ড্রাগন বাগান । বর্তমানে সর্বমোট ৩২ একর জমিতে এখন প্রায় ৩৫ হাজার ড্রাগন এর চারা লাগিয়েছে । এছাড়া মাল্টা , লেবু ও গরুর ফার্ম রয়েছে তার ।

সরেজমিনে গিয়ে দেকা য়ায় লীজ নেওয়া দশ একর জমিতে নতুন করে ড্রাগনের চারা নিজেই লাগচ্ছে আরো ২৫জন জন নি মজুরী লেভারের সাথে । সেখানেই কথা হয় তরুন এ কৃষি উদ্যোক্তা মেহেদী হাসানের সাথে তিনি বলেন, ২০১২ বিশ^বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় বাবার কাছ থেকে ২লক্ষ টাকা ধার নিয়ে পৈত্রিক ২ একর জমিতে ৪ হজার ড্রাগন এবং ২শত মাল্টার চারা লাগাই । এক বছর পরিচর্চা করে প্রথম বছরের ড্রাগন বিক্রি করে আমার যাবতিয় খরচা উঠে পরে । পরের বছর ড্রাগন বিক্রি করে ১০ লক্ষ টাকা এবং ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করি । যা দিয়ে দশ বছর মেয়াদী ১০ একর জমি লিজ নিয়েছি । সেখানে নতুন করে ড্রাগনের চারা রোপন করা হচ্ছে । এ ছাড়াও আমার ছোট বড় ২টি পুকুর আছে যেখানে মাছ মাছ চাষ করি । নিজের ড্রাগন , মাল্টা ও লেবু বাগানের জৈব সারের চাহিদা মিটানোর জন্য দিয়েছি গরুর ফার্ম। সব মিলিয়ে আমার এখন ৩২ একর জমিতে নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে প্রায় ৩৬ হাজার ড্রাগন গাছ , ১৫শত মাল্টার চারা এবং ৬ একর জমিতে লেবুর বাগান রয়েছে । আজ থেকে ৪ বছর আগে ঢাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আজুরা , মরিয়ম জাতের তিনটি আরবের খেজুরের চারা কিনে লাগিয়েছিলাম । সে খেজুর গাছের গোড়ায় একটি চারা আরেকটিতে তিনটি চারা বের হয়েছে । এবছর পুরুষ গাছে ফুল এসেছিল । আগাম বছরে ী স্ত্রী খেজুর গাছে ফুল আসবে বলে আশা করা করছি । পরিচর্চা বুঝি নাই তাই এত দিন খেজুর আসে নাই । পরে যেখান থেকে চারা এনেছি সেখানে যোগাযোগ করে পরিচর্চা কিভাবে করতে হয় তা জেনেছে । এখন সেইভাবেই পরিচর্চা করছি । আগামীতে তিনটি খেজুর গাছের গুড়া থেকে যে চারা পাওয়া যাবে সেগুলো রোপন করব। এইবাবে গড়ে তোলতে চাই আরবের খেজুরের বাগন । পড়ালেখা শেষ করে চাকুরির পিছনে ঘুরে সময় নষ্ট না করে নিজে উদ্যোগে গড়া বাগানে নিজে কাজ করি এবং প্রায় অর্ধশত বেকার লোকের কর্মসংস্থার ব্যবস্থা করে চাকুরি দিয়েছি। আমি কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি। কৃষি বিভাগ ও সরকারী সহযোগীতা পেলে আমার এ কাযক্রম আরো বৃদ্ধি করতে পারবো । সেখানে আরো অনেকের কর্মস্থান হবে । আমি মনে করি বেকাররা হাত গুটিয়ে বসে না থেকে একটু কিছু করা দরকার । পড়ালেখা করে যে চাকুরিই করতে হবে তা তো না ।
ড্রাগন ও মাল্টা বাগানের কাজে অভিজ্ঞ মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন , আমরা ছোট কাল থেকে একসাথে চলি ,আমি এত লেখাপড়া না করলে ও এইটুকু বুঝি মিলন একজন সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী হয়েও কৃষি কাজ করছে । নিজের বেকারত্ব দূর করছে পাশাপাশি আরো প্রায় ৫০জনের কাজের সুযোগ করে দিয়েছে এই বাগান করে। সরকারী সহযোগীতা পেলে আরো এগিয়ে যেতে পারবে ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন , ড্রাগন অত্যান্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি ফল। ফুলবাড়ীয়া উপজেলার লাল মাটি ড্রাগন চাষের উপযোগী হওয়ায় অন্যান্য ফলের পাশাপাশি কৃষকরা ড্রগন চাষ করছে। উপজেলার প্রায় ৬ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করছে হয় । এতে করে কৃষকরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছলতা অর্জন করছে, তেমনি আমাদের দেহের (মানব শরীরের) পুষ্টির অভাবও পূরণ হচ্ছে।